ভালো থাকবেন তাহলে রিয়াজ ভাইয়া।

আমার শৈশবের একেবারে শুরুটা হয় বরিশালে আমার দাদু বাড়ি থেকে। দাদু বাড়িতে থাকতাম আমি, আব্বু,আম্মু,ছোট বোন আর দাদি আপু। শৈশবে আমি ছিলাম সবার আদরের দুলালের মতোই। বাড়ি থেকে একটু পাশেই আব্বুর দূর্সম্পর্কের আত্নীয়দের আদরেই আমার শৈশবের প্রথম দিন গুলো কাটে। রিয়াজ ভাইয়া, লাইলি আপুদের সাথে। বয়সে আমার চেয়ে ঢের বড় হলেও আর আপন না হওয়া সত্ত্বেও কোনোদিন আপন ভাইয়ের বাইরে আমাকে ভাবেনি। এমনকি ওদের বাবা'কে আমিও বাবা ডাকতাম আর মা'কে তো এখনো মা ডাকি। তারও কি ভালবাসা ছিলো আমার প্রতি। প্রতিদিন বাজার করে রিক্সায় বাড়ি ফেরার সময় আমাকে ডাক দিয়ে রিক্সায় তুলে সামনের ২ মিনিটের পথটুকুও রিক্সায় করে নিয়ে যেতো। এতো ভালবাসা ছিলো তাদের যা বছরের পর বছর তপস্যা করেও পাওয়া সম্ভব না।
কাল হঠাৎ করেই রিয়াজ ভাইয়ার আকস্মিক মৃত্যুর খবর আমাকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এই মাসের ২১ তারিখেই দেখা হলো লোকটার সাথে একটা বিয়েতে। টেবিলে যখন খাচ্ছি এমন সময়ে টেবিলের সামনে আসতেই সালাম দিলাম আর সালাম নিলেন হাসিমুখেই। ভাবলাম খেয়ে উঠে কথা বলবো আবার পারলে একটা দুটা ছবিও তুলবো। তাও হলো না আর পাছে অফিসের সময় আমার গড়িয়ে যাচ্ছে। খেয়েদেয়ে যাদের সামনে পেলাম তাদের সাথে টুকটাক কথা বলেই বেড়িয়ে গেলাম অফিসের জন্য। কে জানতো এই লোকটাকে আর পাবোই না!
ছোটবেলায় আমাকে নিয়ে কতো রিক্সায় ঘুরিয়েছে তার হিসাব নেই। আমার জন্য দোলনা বানিয়ে দিয়ে সজোড়ে আকাশের পানে উড়িয়ে দিয়েছে কতোবার এই রিয়াজ ভাইয়া। ঢাকায় আসার পর যখন প্রথম আমাদের বাসায় এলেন সেদিনও এতোকিছু নিয়ে এলেন সাথে করে তাও আমার স্মৃতির পাতায় একদম তরতাজা হয়ে আছে। যাবার সময় যখন এগিয়ে দেই তখনো আবার কতোকিছুই হাতে কিনে দিয়েছিলেন।
বরিশালে যখন পরিবার ছাড়া ৪ বছর রইলাম মাঝে তখনো তো অভিভাবক হয়ে ছিলেন। ভাল-মন্দ খোঁজ খবর নিতেন, ভালবাসতেন।
মাত্র ৩৫ এর মতো বয়সেই তার চলে যাওয়া কি খুব জরুরী ছিলো বিধাতা! সে যা করেছো তো করেছোই, এখন তাকে ওপারে ভালো করে দেখে জান্নাতের ভালো একটা যায়গায় বিছানা করে দিও। আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখুক রিয়াজ ভাইয়া এই প্রার্থনাই করি এবং আপনার এই ভাইটা আপনাকে সারাজীবন মনে রাখবে, ভালবাসবে, দোয়া করবে।
আবার দেখা হবে ওপারে 🙂

Comments

Popular Posts