১০১'টা রোদেলার গল্প

অনেক চেষ্টা করেছিলাম বিয়েটা আটকাতে কিন্তু,পারলাম না।আমাকে তো সেই অষ্টম শ্রেনীতে পড়াকালীন সময় থেকেই বারবার বিয়ে দেবার চেষ্টা।এবার ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ভেবেছিলাম ডাক্তারি পরবো কিন্তু সেই আশাটা এই একটা বিয়ে কেঁড়ে নিলো।বিয়ের আগেই শ্বশুর বাড়ির লোকজন বলেছে- "আর পড়ালেখার দরকার নেই।মাইয়া মানুষ এতো পড়াশুনা কইরা হইবে কি? বিয়া হইলে খালি স্বামীর খেদমত আর সংসারের কাজ করবা।" 
Image result for Hopeless indian beautiful girl
সেদিন থেকে বুঝে গেছি আমার ধারন করা স্বপ্নগুলো একটা বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে গ্রেনেডের বিষ্ফোরনের মতো দুমরে মুচরে যাবে এবং খুঁজেও পাওয়া যাবে না হয়তো এর কোনো অস্তিত্ব।
এখন আমি বাসর ঘরে।সব মেয়ের নিজের বাসর ঘরকে নিয়ে একটা সাজানো বর্ণীল স্বপ্ন থাকে।কিন্তু,আমার বাসর ঘর আমার জন্য একটা কালো বিষাক্ত দুঃস্বপ্ন।শুধু সতিত্ব নয়,এই একটা বাসর ঘরের অন্ধকারেই হাহাকার করে কাঁদতে কাঁদতে অসহায় আত্নসমর্পণ করে মৃত্যু হবে একজন তরুনীর হৃদয়ে টাঙ্গানো স্বপ্নের আর লক্ষ্যের। Related image
জানতাম অন্ধকার বাসরের সাজানো ফুলের বিছানায় একটা কালো বিষাক্ত রাত আমার কাটবে।এ যেন আমার হারের উৎসব পালন করা হচ্ছে ফুল দিয়ে সাজানো সুন্দর এই বিছানায়।বিষাক্ত রাতটা এতো বিষাক্ত হবে কল্পনাও করতে পারিনি।বাসর ঘরে ঢোকার পরেই একটা সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে আমার স্বামী আমাকে প্রশ্ন করলো--"ভার্জিন ?? নাকি আগেও অনেকবার হইছে??"
এমন কিছু শোনার পর আমার পৃথিবীটা যেন উলটে লটকে গিয়ে ধ্বংশের বাতাসে দুলছে।
অনেকের কাছেই তো বাসর ঘরের গল্প শুনেছি...কত্ত ভালবাসার গল্প ছিলো সেগুলো। কই!! কেউতো কোনদিন বলেনি বাসর ঘরে এরকম প্রশ্নও করা হয়।আমার স্বামী যেন তার স্ত্রী আর টাকার বিনিময়ে রাত কাটানো বেশ্যার মধ্যে কোনো পার্থক্যই রাখলো না। আমার নিজের কাছে মনে হচ্ছে আমার পরিবার এতো টাকা পয়সা খরচ করে আত্নীয়-স্বজনকে খাইয়ে,শ্বশুর বাড়ি যৌতুক দিয়ে আমাকে একটা বেশ্যার পরিচয়ের আইডি কার্ড পরিয়ে দিলো। Image result for indian bride in their suhag raat
একটা মেয়ে হিসবে কখনো কল্পনা করিনি বাসর ঘরে এমন প্রশ্নও আমাকে করা হবে।তাই বলে এই ধরনের অভিজ্ঞতা তো আর নতুন নয়।আমি যে মেয়ে...তাই এই ধরনের কথা শুনতে শুনতে আমি অভ্যস্ত।
ঘরের বাইরে বেড় হলেই পাড়ার ছেলেপেলেদের উত্তক্ত আর অশ্লীল কথা আমাকে প্রতিনিয়ত শুনে বাঁচতে হতো।বয়স যখন ৮-৯ আর একটু একটু বোঝার বয়স হয়েছে তখন থেকেই দেখতাম আমাদের শরীরে হাত দেয়ার জন্য পুরুষের এক অনন্য পায়চারা।তারা ছলে,বলে,কৌশলে আমাদের সাথে এমন কিছুই করতে চায় যা সমাজের সম্পূর্ণ বীপরিত কিন্তু,এটাই সমাজের আসল চেহারা।যুবক,মধ্যবয়স্ক কিংবা একেবারেই বুড়ো কেউ কম যায় না।সবারই একটাই উদ্দেশ্য।আরেকটু যখন বড় হলাম তখন থেকে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটার সম্মুখীন হয়েছি তা হলো--"তোমার ব্রেসিয়ারের সাইজ কতো?"
পৃথিবীতে আমাদের বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যই যেনো পুরুষের সব ধরনের শারিরীক চাহিদা আর ইচ্ছার পন্য হবার জন্য।
জানেন? কয়দিন আগে আমি এমনও দেখেছি আমার বান্ধবীর কন্যা সন্তান হবার কারনে সেই সন্তানকে হত্যার চেষ্টা আর আমার বান্ধবীকে পোহাতে হলো নানা রকম অত্যাচার মারধোর। আমাদের নারীদের উপর সেই মধ্যযুগের বর্বরতা এখনো চলছে। পার্থক্য শুধু তখকার সময়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে নারীর উপর ধর্ষণ ,অবহেলা আর হত্যাযজ্ঞ চালানো হতো আর বর্তমানে তা সবই চলে কৌশলে গোপনে।
Image result for rape on asian girl
আমাদের সমাজ আইন বোবা মূর্তির ন্যাইয় সবকিছু দেখে।কিছু কিছু মানুষ নারীর ওপর চালানো এইসব অবহেলাকে দেখে নির্মমভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে,দৈত্যের রূপে হাসে।
বিষাক্ত এসিডের স্পর্শে আমাদের কোমল মুখমন্ডলকে ঝলসে দেয়া হলে তখন সমাজের আয়নাগুলো পর্দায় ঢাকা থাকে।আমাদের ছলে বলে কৌশলে ধর্ষণ করে আত্নহত্যার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দেখি আমাদের পোশাকের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে আর আমাদের চরিত্রকে জ্বালিয়ে মারা হয় নির্মম এই শ্বসানে।Related image

আমাদের লালিত স্বপ্ন আর লক্ষ্যকে গলা টিপে মেরে ফেলা হয় চার দেয়ালের মাঝখানে।
আমাদের অনুভুতি, ইচ্ছা,স্বপ্ন সবকিছুকে মেরে ফেলে আমাদেরকে জীবিত রাখা হয় নতুন পোশাকে মোরানো হাস্যজ্বল শপিংমলের মূর্তি গুলোর মতো।অথচ এই সমাজের বিষাক্ত ছোবলে আমার মতো বাকি ১০০'টা রোদেলা'ও মৃত।

Comments

Popular Posts